নিজস্ব প্রতিবেদন : আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কোম্পানিগঞ্জ-কবিরহাট) আসন থেকে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি হেভিওয়েট হলেও অন্য দলের বাকি ৪ প্রার্থীই ভোটের মাঠে নবাগত।
অন্যদিকে ১৯৯১-২০০৮ পর্যন্ত ৪টি নির্বাচনে অংশ নেওয়া ওবায়দুল কাদের চারবারই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এই আসনেরই আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী মওদুদ আহমদের সঙ্গে। চারবারে দুইবার নৌকাকে লক্ষ্যে পৌঁছালেও দুইবার তরী ডুবেছিল। তবে এবার শক্ত কোনো প্রার্থী না থাকায় নৌকার বিজয় কেতন ওড়াবেন ওবায়দুল কাদের, এমনটাই বলছেন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা। ফলে অনেকটা নিরুত্তাপ নির্বাচনে বাধাহীন জয়ের পথে নৌকা।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১-২০০৮ সাল পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের পরাজিত হয়েছেন দুই বার এবং বিজয়ী হয়েছেন দুই বার। ১৯৯১’র নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। কিন্তু জীবনের প্রথম নির্বাচনে হোঁচট খান মওদুদের কাছে। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন বিরোধী পক্ষ বর্জন করায় আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে একই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির একই প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মওদুদ আহমদ। সেই নির্বাচনে পরাজিত হন নৌকার মাঝি ওবায়দুল কাদের। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেভিওয়েট মওদুদ আহমদকে পরাজিত করে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন ওবায়দুল কাদের। ২০১১ সাল থেকে তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে পরপর তিনবার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। এই আসনের দুই উপজেলায়ই প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে আছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওবায়দুল কাদের। সাধারণ ভোটাররা জানান, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় এ আসনে কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। সুতরাং নৌকার প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ছোট রাজাপুর গ্রামের তরুণ ভোটার আবু সাইদ বলেন, মাঠে খেলোয়াড় আছে একজনই। আমিতো তাকেই ভোট দেব। এলাকার উন্নয়নে আর কোনো প্রার্থীকেও দেখছি না, কোনো প্রচার প্রচারণাও দেখছি না।
কবিরহাট উপজেলার সাইফ উদ্দিন বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প নেই। তিনি গত তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে এই এলাকায় যে উন্নয়ন করেছেন, তা অব্যাহত রাখতে হলে তাকেই আবার দরকার। নোয়াখালী-৫ আসনে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলেও অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ (লাঙল), জাসদের মোহাম্মদ মোকছেদুর রহমান (মশাল), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ সামছুদ্দোহা (চেয়ার) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের শাকিল মাহমুদ চৌধুরী (ছড়ি)।
গত ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর এবং ৩১ ডিসেম্বর ওবায়দুল কাদের নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন। এসব সভায় তিনি তার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আগামী ৭ তারিখে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান সাধারণ ভোটারদেরকে।
ওবায়দুল কাদের ছাড়া বাকি চার প্রার্থীই নবাগত। জাতীয় পার্টির তরুণ প্রার্থী খাজা তানভীর আহমদের পক্ষে কিছু প্রচার-প্রচারণা থাকলেও সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। অন্যদিকে জাসদ দল হিসেবে পুরোনো হলেও দলীয় প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম নেই। অন্য দলের প্রার্থীদের এলাকার ভোটাররা তেমন একটা চেনেন না। ফলে এ আসনে নৌকার বিপক্ষে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই। ভোটারদের আলোচনায় কেবলই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওবায়দুল কাদের। বয়সে তরুণ জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ কিছুটা আলোচনায় থাকলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো অবস্থায় নেই।
সুজনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের বলেন, নোয়াখালী-৫ সবসময় গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। কারণ এখানে ১৯৯১ সাল থেকে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ওবায়দুল কাদের। ফলে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতো। কিন্তু মওদুদ আহমদের মৃত্যুর পর এবং এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় অনেকটা নিরুত্তাপ নির্বাচনই বলা চলে। জাতীয় পার্টি, জাসদ প্রার্থী থাকলেও ফলাফল কি হবে তা আঁচ করা যাচ্ছে।
নোয়াখালী-৫ আসন কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ৪ হাজার ৯৯৭ জন। পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯ হাজার ৬৯৩ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৪ জন।
আপনার মতামত লিখুন :