• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪

আমার বাবাকে মুক্তি দিন, আমি তার আদর পাইতে চাই

উপজেলা প্রতিনিধি, সদর : বাবা বাবা বলে অনেক কান্না করেছি। আমার বাবাকে কেউ এনে দিতে পারেনা। মা বললো আমার কারাগারে।

আমি কখনো বাবার স্পর্শ পাই নাই। তিনি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যান নাই। আমি আমার বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। আমার বাবাকে মুক্তি দিন, আমি তার আদর পাইতে চাই।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা জজ আদালতের গ্রিল ধরে এভাবেই কান্না জড়িত কথা গুলো বলছিলেন সাড়ে চার বছরের মোহাম্মদ সামিন।

মোহাম্মদ সামিন নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার ৮ নং আসামি মোশারফের (৩৫) ছেলে। মোশারফ সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামের তোফায়েল আহমেদের ছেলে।

এসময় পাশে থাকা মোশারফের স্ত্রী আরজু বেগম বলেন, সামিনকে তার বাবাকে দেখানোর আদালতে আনসি। তাকে দেখানোর পর সে বাবা বলে চিৎকার দিয়ে উঠেছে। তার চিৎকার শুনে আমার বুকটা ফেটে গেছে। যা কাউকে দেখাতে পারবো না।

মিথ্যা মামলায় আজ পাঁচ বছর আমার স্বামী কারাগারে। এই বাচ্চাটাকে সে কখনো আদর করতে পারে নাই। সন্তান পেটে থাকতে তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার স্বামীর মুক্তি চাই। আল্লাহর আদালতে ন্যায় বিচার চাই।

মামলার ১০ নং আসামি মো. রুহুল আমিনের স্ত্রী রিম্পা বেগম বলেন, আমার স্বামীর ইউপি সদস্য ছিলেন। আমার স্বামীর ফোন সাইলেন্ট ছিল। তিনি ফোন ধরতে পারেন নাই। তার সাথে যে ইউপি সদস্য হতে পারে নাই তারা ষড়যন্ত্র করে এই মামলার আসামি করেছে। আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আসামিপক্ষের পাঁচজন সাফাই সাক্ষী দিয়েছে। মামলায় রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ৮ জন আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন তার মধ্যে মোশারফ ও রুহুল আমিনের নাম নেই। তবে জবানবন্দিতে ৮ আসামি ছাড়া বাকি আটজনকে সহকারী হিসেবে নাম এসেছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রছুল মামুন বলেন, সুবর্ণচরে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সেই আলোচিত ঘটনায় মামলাটির রায় আজ ঘোষণার কথা ছিল। সকালে আসামিদের হাজির করা হয়। বিচারক শুনানি শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি নতুন দিন ধার্য করেন। এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন ১৫ জন আসামি। একজন পলাতক রয়েছেন। ভুক্তভোগী নারী ন্যায়বিচার পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।

প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার রায় আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে ঘোষণার কথা ছিল। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস নতুন দিন ৫ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেন। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন জেলা জজ ফাতেমা ফেরদৌস।

মামলার আসামিরা হলেন, সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামের মো. সোহেল (৩৮), মো. হানিফ (৩০), স্বপন (৪২), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বাদশা আলম বসু (৪০), আবুল হোসেন আবু (৪০), মোশারফ (৩৫), মো. সালাউদ্দিন (৩২), মো. রুহুল আমিন (৪০), মো. জসিম উদ্দিন (৩২), মো. হাসান আলী বুলু (৪৫), মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮), মো. মুরাদ (২৮), মো. জামাল ওরফে হেঞ্জু মাঝি (২৮) ও মো. সোহেল (২৮)। এছাড়া আসামি মো. মিন্টু ওরফে হেলাল ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।

আরও পড়ুন