• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪

জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবন পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর

উপজেলা প্রতিনিধি, সদর : শীতে জুবুথুবু হয়ে জরাজীর্ণ ঘরের এক কোনায় বসে আছেন পুলিশ বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৭৮)। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বীর নিবাসের জন্য আবেদন করলেও ভাগ্যে জোটেনি সরকারি ঘর। রেজিয়া বেগমের আক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর কত অসহায় মানুষকে দেওয়া হলো, তার ভাগ্যে একটি ঘর জুটল না।

জানা গেছে, সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামের জয়নাল পুলিশের বাড়িতে দুই ছেলে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করছেন রেজিয়া বেগম। তার স্বামী জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে দুই ছেলেকে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে থাকছেন রেজিয়া।

সরেজমিন দেখা যায়, সদর উপজেলার কাদিরহানিফ ইউনিয়নের জয়নাল পুলিশের বাড়িতে একটি জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেজিয়া বেগমেএ বিধবা স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান। টিন দিয়ে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন। বৃষ্টি হলে টিনের চালার ছিদ্র দিয়ে পানিতে সয়লাব হয়ে যায় ঘরের কাঁচা মেঝে। বৃষ্টির মধ্যেই তাদের সারারাত জেগেই কাটাতে হয়। রোদ এলে আবার রোদে শুকাতে হয়। জরাজীর্ণ ঘরে প্রবেশ করছে কুয়াশা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী রেজিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী পুলিশে চাকরি করতো। কাউকে না বলে ৯৭১ সালে দুইটা সন্তান রেখে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছেন। অনেকে বলেছেন উনি যুদ্ধে মারা গেছেন, আমি যেনো নাকফুল খুলে ফেলি। আমি খুলি নাই। যুদ্ধের ২২ দিন পর আমার স্বামী বাড়িতে আসছে। ২০০৪ সালে তিনি মারা গেছেন তখন কোনো সুযোগ সুবিধা তিনি পাননি। বর্তমানে পুলিশের ভাতা আর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাই। একটা ঘর নাই তাই কষ্টে আছি। উপজেলায় গেছি, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গেছি। আমি মহিলা মানুষ তাই কেউ দাম দেয় না।

রেজিয়া বেগম আরও বলেন, আমি কোনো সুখে নাই। ভাতা যা পাই তা দিয়ে কোনো রকম চলি। তিন মেয়েকে বিয়ে দিসি। দুই ছেলে অসুস্থ তারা কাজ কর্ম করতে পারে না। এক দিন করলে তিন দিন বসে থাকে। সবাইকে নিয়ে এই ঘরে খুব কষ্টে আছি। বৃষ্টিতে ভিজি আর রোদে শুকাই। একটা ঘর হলে ভালো হয়। আমি শেখ হাসিনাকে ভোট দিসি। অনেকে বলসে ভোট না দিতে। আমি সব সময় হাসিনাকে ভোট দেই। কারো থেকে টাকা খাই দিই না, নিজের মন থেকে দেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের ছোট মেয়ে আনোয়ারা বেগম বলেন, আমরা ডিসি অফিসে গেছি, ইউএনও অফিসে গেছি কোথায় সাড়া পাইনি। আমার মা ঝড়ে বৃষ্টিতে ভাই ও তাদের ছেলেদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছে। ঘর নাই বলে কষ্টের শেষ নাই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের ছোট ছেলে আবদুল জলিল বলেন, আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছি। টাকার জন্য ঘর করতে পারছিনা। সরকার যদি আমাদের দিকে তাকায় তাহলে আমাদের খুব উপকার হতো।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত জয়নাল আবেদীনের বড় মেয়ের জামাই মোস্তফা কামাল বলেন, জয়নাল আবেদিন পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ২০০৪ সালে মারা গেছেন। তারা পুলিশ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান। ঘর না থাকায় তারা খুব কষ্টে আছেন। একটা ঘর হলে তাদের জন্য ভালো হতো।

কাদির হানিফ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে আমি জেনেছি কিন্তু এখনো ঘর পান নি। বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও সন্তানেরা জরাজীর্ণ ঘরে খুব কষ্টে আছেন। এটা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। শুনেছি প্রথম পর্যায়ে যারা বীর নিবাস পাননি তারা দ্বিতীয় পর্যায়ে পাবেন।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা বলেন, আপনার মাধ্যমে আবেদনের কাগজপত্র গুলো পেয়েছি। আমি দেখবো কেনো ঘর পাননি। বা আবেদনের কোথাও ত্রুটি আছে কিনা। তবে আমরা আবেদন গুলো মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেই। তারাই যাচাই-বাছাই করে ঘর বরাদ্দ দেন। আমি চাই দ্রুত তারা যেনো ঘর পান। সেবিষয়ে আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।

আরও পড়ুন