• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪

প্রণোদনার বীজবাদামে কৃষকের সর্বনাশ

উপজেলা প্রতিনিধি, হাতিয়া : কৃষি প্রণোদনার ভেজাল বীজবাদামে সর্বনাশ হয়েছে হাতিয়া উপজেলার চাষীদের। প্রণোদনার অংশ হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা বীজবাদাম রোপনের ১৭ দিন পরও অঙ্কুর গজায়নি। তাছাড়া আবাদ মৌসুম শেষ মুহূর্তে বীজ বিতরণ করায় অনেকক্ষেত্রে তা চাষীর কাজেও আসছে না। বহুক্ষেত্রে এ বীজবাদাম অপাত্রে বিতরণ করায় ইহা খোলায় টেলে খেয়ে ফেলারও খোঁজ পাওয়া যায়। এসব নিয়ে চাষীরা সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের দায়ী
করেছেন।

চাষীরা বলছেন, এসব বীজবাদাম খুব নিন্মমানের এবং বিকৃত রংয়ের। সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয় করে এসব নিম্নমানের বীজ কিনে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থের যেমন ক্ষতিসাধন হচ্ছে তেমনি কৃষকেরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

সোমবার থেকে আজ বুধবার ( ২৪ জানুয়ারী) কয়েকটি কৃষি জমি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে চাষীদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

উপজেলার শুন্যেরচর গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন জানান, সরকারি বীজ বাদাম ৬ জানুয়ারীতে পেয়ে ৮জানুয়ারীতে রোপন করছি। ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও তার একটা বীজও উঠেনি। আর ঘরের বাদাম দিয়ে যে ১০কড়া(২০ শতক) জমি রোপণ করেছি সেগুলোর বীজ উঠে গেছে। তিনি আরো জানান, কৃষি অফিস লোভ দেখিয়ে নষ্ট, কমদামি ও পঁচা বীজ দিয়ে আমাদেরকে সবদিকে ক্ষতি করেছে।
একই গ্রামের কৃষক রাশেদ জানান, কৃষি তালিকাভুক্ত পাশের বাড়ির শাহজাহান থেকে সে সরকারি বীজবাদাম কিনে রোপন করেছে। অথচ একটা বীজও উঠেনি। আর বাজার থেকে যেগুলো কিনেছে সেগুলোর চারা গজিয়েছে। এই দুই কৃষক জমিতে রোপনকৃত বাদামের সারিগুলো খুড়িয়ে খুড়িয়ে দেখায় যে, সবগুলো বাদাম পঁচে গেছে।

রেহানিয়া গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, আমার একটা হাত নেই, প্রতিবন্ধী মানুষ! ধারকর্জ করে কাজের লোক খাটিয়ে ১ একর ৬০ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেছি। সরকারি এক নাম পেয়েছি। বাকিগুলো কৃষি তালিকাভুক্ত পার্শ্ববর্তী ইসমাইল এবং রিপনসহ কয়েকজন থেকে বাজার দামের চেয়ে ৪০ টাকা কম পেয়ে কিনেছি। রোপণের ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও সরকারি এ বীজবাদাম গুলোর এখনো চারা গজায়নি। অথচ ঘরের বীজ বাদামগুলোর চারা উঠে গেছে একসপ্তাহ আগে। তিনি বলেন, সরকারি বীজগুলোর চারা না উঠায় তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বুড়িরচর ইউনিয়নের জুয়েল নামের এক কৃষক এবং ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার হেলাল উদ্দিন জানান, সময়মত বীজ দেয়নি, মানুষ খোলায় টেলে খেয়ে ফেলছে।

নলচিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনছুর উল্লা শিবলী জানান, বাদাম গুলো নিন্ম মানের ছিল। তাই কৃষি অফিসার সহ আমরা কৃষকদের বলে দিছি- আপনারা এগুলো বিক্রি করে দিয়ে ভাল বীজ কিনে নিবেন।

এদিকে, প্রণোদনার বীজবাদাম ভেজাল এবং বিরূপ কালার হওয়ায় উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ তা গ্রহন করেননি। এ নিয়ে নোয়াখালী বিএডিসি থেকে কর্মকর্তারা এসে তাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বীজগুলো গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান তার অবস্থানে অটল ছিলেন। যদিও বাকি দশ ইউপি চেয়ারম্যান তা গ্রহন করে তালিকাভুক্ত্দের মাঝে উক্ত বাদামগুলো বন্টন করে দেয়।

এবিষয়ে আজাদ চেয়ারম্যান জানান, ভেজাল ও বিকৃিত রংয়ের বাদামগুলো ফেরত দেওয়ার পর মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারী) নতুন করে দেওয়া হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ নানান, বীজগুলো বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) আমাদেরকে সরবরাহ করে, তাছাড়া এ বীজবাদামগুলো পর্যবেক্ষণ করতে আরও একসপ্তাহ সময় লাগবে।

উল্লেখ্য, হাতিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়। প্রতি হেক্টরে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ১.৩ মে.টন হারে বাদাম উৎপাদন ধরা হয় ১৬ হাজার নয়শত মে.টন। যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা। কিন্তু অন্য এক তথ্যে জানা যায়, রবি/২০২৩-২০২৪ মৌসুমে প্রণোদনার আওতায় এ উপজেলাতে ১৫ মে.টন চিনাবাদাম এসেছে। এরমধ্যে রং খারাপ ও নিন্ম মানের হওয়ায় চরঈশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ ১.৫ মে.টন বাদাম ফেরত দেয়। যার সুরাহার জন্য হাতিয়া উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিএডিসি নোয়াখালী জেলার উপ-পরিচালক বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। উল্লেখিত চাষী এবং একাধিক চেয়ারম্যান জানান গতবছরও প্রণোদনার বীজে কৃষক মার খেয়েছে।

বীজের অঙ্কুরোদগম না হওয়া এবং চরঈশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান বীজ পরিবর্তন করে দেওয়ার বিষয়ে বিএডিসর নোয়াখালী জেলার উপ-পরিচালক নুরুল আলম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তীব্র শীতের কারণে বীজ গজাতে বিলম্ব হতে পারে। আর চরঈশ্বর ইউনিয়নে মান ঘোষিত(তৃতীয় শ্রেণীর) বীজ পরিবর্তন করে এখন ভিত্তবীজ(মূল বীজ) দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন