• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ভোটের রাতে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, ৫ বছর পর মামলার রায় আজ

নিজস্ব প্রতিবেদন : পাঁছ বছর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার রায় আগামীকাল সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা করা হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস এ রায় ঘোষণা করবেন। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করেন বিচারক। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় সেদিন তারিখ পরিবর্তন করে ৫ ফেব্রুয়ারি) ধার্য করা হয়।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে ওই গৃহবধূকে (৪০) মারধর করে গণধর্ষণ করা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ঘটনাটি ঘটায় তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনায় আসে। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননী ছিল। তার অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে।

আদালত সূত্র জানায়, ঘটনার পরদিন ৩১ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

কী হয়েছিল সেদিন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে এলাকার সবাইকে স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন পরদিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ওই নারীও ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে ভোট দিতে যান। ভোটকেন্দ্রে যেতেই স্থানীয় কয়েকজন যুবক তার ভোট হয়ে গেছে বলে বাড়ি চলে যেতে বলেন।

তিনি বলেন, আমি এত কষ্ট করে টোকেন খুঁজে বের করে ভোট দিতে আসছি। আমার ভোট দিতেই হবে। এ কথা বললে ওই যুবকেরা আমাকে ভোট দিতে দেয়। তারপর ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখি একটি টুলের ওপর ব্যালট পেপার রাখছে। কোনো গোপন কক্ষও ছিল না। আমি ব্যালট হাতে নিয়ে ধানের শীষে সিল দিয়েছি। তারপর তারা আমার ব্যালট পেপার ভাঁজ করে দিতে চায়। আমি সেটা করতে না দিয়ে ব্যাটলটি বাক্সে রেখে চলে আসছি।

এই নারী আরও বলেন, রুহুল আমিন ও তার সঙ্গে থাকা যুবকেরা সে সময় তাকে দুই আঙুল দেখিয়ে কিছু একটা ইঙ্গিত দেয়। বিকেলে ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাড়িতে ঢুকে তার স্বামী ও ছেলেকে বেঁধে ফেলে। পরে পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে।

আদালতের স্টেনোগ্রাফার মো. সামছুদ্দিন বলেন, আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণার পূর্ববর্তী সব কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তাই নির্ধারিত তারিখে, অর্থাৎ আগামীকাল রায় ঘোষণা করা হবে। গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে ১৬ জানুয়ারি রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু রায় লেখার কাজ শেষ না হওয়ায় সেদিন রায় ঘোষণা করা হয়নি। একই দিন (১৬ জানুয়ারি) রায় ঘোষণার পরবর্তী তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আসামি পক্ষের পাঁচজন সাফাই সাক্ষী প্রদান করে। কোনো সাক্ষীই ভোট কেন্দ্রে পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেনি। মামলায় রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মো. মিন্টু ওরফে হেলাল (২৮) নামে একজন আসামি ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে।

আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রছুল মামুন বলেন, সুবর্ণচরে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সেই আলোচিত ঘটনায় মামলাটির রায় আজ ঘোষণা করা হবে। এ মামলায় কারাগারে রয়েছে ১৫ জন আসামি। তাদের মধ্যে ৮ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ভুক্তভোগী নারী ন্যায় বিচার পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।

মামলার বাদী নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বলেন, রায়কে ঘিরে আমরা আতঙ্কে আছি। কারণ আসামিরা প্রভাবশালী এবং খারাপ লোক। বিষয়টি সুবর্ণচরের চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামকে অবহিত করেছি। সোমবার রায় ঘোষণাকালে স্ত্রীসহ আদালতে উপস্থিত থাকবো।

রায় ঘোষণা প্রসঙ্গে কান্নাজড়িত কণ্ঠে চার সন্তানের জননী ভুক্তভোগী নারী ঢাকা পোস্টকে করেন, আমি ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে সেই দিন আওয়ামী লীগের রুহুল আমিন মেম্বার ও তার লোকজন আমার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। আমি সেই নির্যাতনের ঘটনা কিছুতেই মন থেকে মুছতে পারছি না। সারাক্ষণ নির্যাতনের দৃশ্য আমার চোখে ভাসে। আদালতের কাছে আমি ন্যায়বিচার চাই। এ ছাড়া আমার চাওয়ার কিছু নাই।

চরজব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, রায় ঘিরে যেনো কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।

আরও পড়ুন