![দৈনিক নোয়াখালীর কথা]( https://dailynoakhalirkatha.com/wp-content/uploads/2023/04/logo-noyakhali.png )
উপজেলা প্রতিনিধি, সদর : আল্লাহর গজব পড়বো। আমি জাররা আমি যাত্রা পরিমান কিছু জানি না। আমাকে মিথ্যা একটা সাজা দিছেন আল্লাহ বিচার করব। যারা এই মামলার যুক্তি দিয়েছেন তাদের বিচার আল্লাহ করব। আল্লাহ তুই তাদের বিচার করিস তাদের উপর গজব দিস। একটা মিথ্যা মামলা সাজা দিছে জাররা পরিমাণ জানিনা। আল্লাহ তুই সাক্ষী আল্লাহ তো এদের বিচার করিস। তোর জমিনে আল্লাহ বিচার করিস। সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রায় ঘোষণা শেষে এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় এসব কথা বলেন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক গৃহবধূকে (৪০) দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মৃত খুরশিদ আলমের ছেলে মো. রুহুল আমিন।
এর আগে রায় ঘোষণার সময় এজলাস থেকে প্রতিবাদ করেন আসামিরা। তাদের ফাঁসানো হয়েছে বলে তারা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এসময় তারা রায় সংশ্লিষ্ট সকলের বিচার দাবি করেন।
রুহুল আমিনের মেয়ে লামিয়া ফারজানা বলেন, আল্লাহ আপনি ত সব কিছু জানেন। আমার আব্বু কিচ্ছু করে নাই। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। একটা মহিলাকে এত গুলো মানুষ ধর্ষণ করতে পারে না। আল্লাহ আপনি সাক্ষী। আমার বাবা নির্দোষ, তিনি কোনো দোষ করেন নাই। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। সেদিন আমার বাবা আমার পাশে শুয়ে ছিলেন। তিনি কিচ্ছু করেন নাই।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মো. মুরাদের মা বিবি রসিয়া খাতুন বলেন, আমার সন্তান কোনো দোষ করে নাই। বিনা বিচারে আজ পাঁচ বছর তাদের কারাগারে রাখসে। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি আমার সন্তানের মুক্তি চাই।
আরেক মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিনের বোন ফাতেমা বেগম বলেন, আমার ভাই আমাদের অভিভাবক ছিলেন। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। পাঁচটা বছর আমরা দুঃখে কষ্টে কাটিয়েছি। আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২–এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামীর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদন্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। একই সাথে তাদের সবাইকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডও করা হয়।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে কাঠগড়ায় মো. মিন্টু ওরফে হেলাল ছাড়া ১৫ আসামি উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে এক নারীকে (৪০) মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননী। নির্যাতিত নারীর অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জের ধরে ওই হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনার পরদিন (৩১ ডিসেম্বর) নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে চর জব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলার তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কার হওয়া প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিগত ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি মোল্লা হাবিবুর রছুল মামুন বলেন, সুবর্ণচরে নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের সেই আলোচিত ঘটনার মামলার রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট। আদালত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন। ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী ন্যায়বিচার পেয়েছেন। যুগান্তকারী রায় হয়েছে। এই রায় দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ছালেহ আহম্মদ সোহেল খান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আসামি পক্ষের পাঁচজন সাফাই সাক্ষী প্রদান করে। কোনো সাক্ষীই ভোট কেন্দ্রে পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেনি। আদালত ইউপি সদস্য রুহুল আমিন ও মো. হাসান আলী বুলুসহ স্বীকারোক্তি দেওয়া ৮ জনসহ মোট ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পলাতক আসামি মো. মিন্টু ওরফে হেলালসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :