• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জরাজীর্ণ ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে বিধবা শ্যামলী রানীর

স্টাফ রিপোর্টার : নেই স্বামী নেই ছেলে সন্তান। ধার দেনা করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও নিজের খাবার জুটেনা। এক বেলা খেতে পারলেও উপোস থাকেন দুই বেলা। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে করছেন জীবনযাপন। দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ একটি ঘরে করেন বসবাস। কুয়াশা-বৃষ্টি-বাতাসের আতঙ্কে ভাঙা ঘরে নির্ঘুম রাত কাটে তার। বলছিলাম বেগমগঞ্জ উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের জগেন্দ্র উকিলের বাড়ির মৃত ফরেশ চন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী শ্যামলী রানি মজুমদারের কথা।

জানা যায়, মাত্র দুই শতক জমিতে রেখে শ্যামলী রানি মজুমদারের ১০ বছর আগে স্বামী ফরেশ চন্দ্র মজুমদার মারা গেছেন। এছাড়া নেই কোনো সহায়-সম্বল। ঋণ করে মানুষের কাছে হাত পেতে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিঃস হয়েছেন তিনি। বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যের বাড়িতে করতে হয় ঝিয়ের কাজ। এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন শ্যামলী। বসতঘর জরাজীর্ণ, নেই জানালা কিংবা দরজা। জোড়াতালি এ ভাঙা ঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে চলছেন তিনি। একমুঠো খাবারের যোগানে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাবেন কিন্তু চোখে আসে না ঘুম। শীতের কুয়াশায় আর বৃষ্টি-বাতাসে আতঙ্কে একাকী নির্ঘুম রাত কাটে তার। বর্ষাকালে আকাশের মেঘ দেখলে দৌড় দিতে হয় অন্যের ঘরে। আর শীতকালে কনকনে বাতাস আর কুয়াশায় ভিজে যায় বিছানাপত্র।

শ্যামলী রানী মজুমদারের প্রতিবেশী তাপস মজুমদার বলেন, এই ঘরটায় থাকার মতো অবস্থা নাই৷ পুরো ভেঙে গেছে। এতদিন এখানে থাকলেও আজ কয়েকদিন একেক সময় একেক মানুষের ঘরে থাকছেন। উনার দুইটা মেয়ে আছে। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। তারা কখনো স্বামীসহ বেড়াতে আসতে পারেনা৷ সকালে আসলে বিকেলে চলে যায়। এই ঘরে বসার মতো অবস্থা নাই। নাই জানালা নাই দরজা।

আরেক প্রতিবেশী সুজন মজুমদার বলেন, স্বামীহারা শ্যামলী রানী এখন খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। একটি মাত্র ঘর, তাও আবার ভাঙাচোরা। একদম বসবাস অনুপযোগী। সরকারি কিংবা কোনো ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হতো।

শ্যামলী রানীর বড় মেয়ে অপর্ণ্যা রানী মজুমদার বলেন, আমার মা খুব কষ্টে আছেন। আমাদের ঘর নাই। আমাদের বাবা নাই ভাই নাই। আমরা স্বামীর বাড়ি থেকে আসতে পারি না। দিনে এসে দিনে চলে যাই। জামাইদের বসার মতো জায়গা নাই।

বিধবা শ্যামলী রানী মজুমদার বলেন, আমার স্বামী ও নাই ছেলেও নাই। আমার ঘর ভাঙার পরে কান্নাকাটি করে মানুষের ঘরে থাকি। আমার করবার মতো ক্ষমতাও নাই। দশের ঘরে থাকি যে আমার কষ্ট হয়। আমার বাঁচারও দায়। ঘরের কারণে খুব কষ্টে আছি। সীমার অতিরিক্ত কষ্ট, বলার কিছু নাই।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিখা সংসদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘরটা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। ঘরটি খুবই জরাজীর্ণ। তিনি খুব কষ্টে বসবাস করছিলেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা শ্যামলী রানীর পাশে দাঁড়াতে চাই। আমাদের প্রবাসী বিত্তবানরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। আমরা সে টাকায় নতুন ঘর নির্মাণ করে দিতে চাই। বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে সমাজে আর অসহায় মানুষ থাকবেনা। আমাদের সমাজ পরিবর্তন হলে, আমাদের দেশ পরিবর্তন হবে।

আরও পড়ুন