• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

গত বছর তিন মাসে জেলায় ১৩ জন নারী ও কন্যাশিশু সহিংসতার শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদন : জেলায় সংগঠিত নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নারী অধিকার জোট নোয়াখালী। ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জেলাতে ১৯ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এই ১৯ জনের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ জন, হত্যার শিকার হয়েছেন ৮ জন, শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ জন এবং আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪টি। জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারি-মার্চ মাসে জেলায় ১৩ জন নারী ও কন্যাশিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এপ্রিল-জুন ২০২৩ এই তিন মাসে ২৬ জন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৩ এই তিন মাসে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৩০ জন। দেখা যাচ্ছে ২০২৩ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৮৯ জন নারী ও কন্যা কিশোরী ও শিশু ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা, আত্মহত্যা এবং শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

যৌতুকের জন্য হত্যা এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ বা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারী। জমি দখলের জন্য নারীকে যৌন হয়রানি এবং শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে। পারিবারিক কলহের কারণে গৃহবধু হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর ঘটনা বলে থানায় মামলা দায়ের হচ্ছে। খেলাকে কেন্দ্র করে দুই শিশুর ঝগড়ার কারণে এক অভিভাবকের হাতে খুন হয়েছে ৭ বছরের শিশু। হাঁসে ধান খাওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী সহিংসতার ঘটনা বেশী ঘটেছে হাতিয়া উপজেলায়।

অপরদিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- ১ এ সদর, বেগমগঞ্জ, চাটখিল কোম্পনীগঞ্জ, সেনবাগের আদালতে অক্টোবর- নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত বিচারপ্রার্থী হয়েছেন ১০৫ জন ভুক্তভোগী এবং নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ কবিরহাট, সোনাইমুড়ী, সুবর্ণচর, হাতিয়ার আদালতে বিচারপ্রার্থী হয়েছেন ৫৩ জন। অর্থাৎ এ প্রান্তিকে আদালতে মোট বিচারপ্রার্থী হয়েছেন ১৫৮ জন ভুক্তভোগী। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ আদালতে বিচার প্রার্থী হয়েছিলেন ২১১ জন। এপ্রিল-জুন ২০২৩ প্রান্তিকে আদালতে বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেন ১৯০ জন এবং জানুয়ারি-মার্চ ২০২৩ প্রান্তিকে বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেন ১৫৭ জন। দেখা যাচ্ছে ২০২৩ সালে মোট বিচারপ্রাার্থী হয়েছেন ৭১৬ জন। গত ২০২৩ সালে এক বছরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মোট বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেন ৫৭৮ জন। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে নোয়াখালীতে নারীর প্রতি সহিংসতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।

নোয়াখালী নারী অধিকার জোট নোয়াখালীর আহবায়ক লায়লা পারভীন ও সদস্য সচিব মনোয়ারা আক্তার মিনু সাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয়-স্থানীয় গণমাধ্যম এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে নাগরিক সমাজ, সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসন বুঝতে পারে নোয়াখালীতে নারীর প্রতি সহিংসতার হার ক্রমশ উদ্ধমুখী নাকি নিম্নমুখী। নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক কুসংস্কার এবং নারীর প্রতি ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক অপপ্রচারের ফলে নারীর প্রতি সাধারণ মানুষের মনোভাব পরিবর্তন হচ্ছে না। তাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের আন্তরিকতা থাকলেও নোয়াখালীতে নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের মত ঘটনাকে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা দরকার। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সক্রিয় প্রতিরোধে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার থাকলে গ্রামে কিংবা শহরে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। নারী অধিকার জোট বিশ্বাস করে সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক আন্দোলন এবং কঠোর আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা হ্রাস করা সম্ভব।

আরও পড়ুন