• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

অসুস্থ সেলিমের জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন, বিয়ে হচ্ছেনা মেয়েদের

স্টাফ রিপোর্টার : প্রায় চার বছর ধরে অর্থের অভাবে করাতে পারছেন না নিজের চিকিৎসা। ৬ মেয়ে, ১ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে জরাজীর্ণ ও ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঠিকমতো তিন বেলা খাবারও জোটেনা। মাথা নিচু করে করতে হয় ঘরে প্রবেশ। ঘরে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। বিবাহযোগ্য চার মেয়ে থাকলেও ঘরের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না। বলছিলাম নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের চর লক্ষী গ্রামের মাইন উদ্দীন সেলিমের (৪৯) কথা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চর লক্ষী গ্রামের বাসু মেকানিকের বাড়িতে ভাঙা বেড়া, পাতা এবং পলিথিনে মোড়ানো ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস মাইন উদ্দীন সেমিল-আনোয়ারা বেগম দম্পতির। অভাবের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি আর শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন। ঘর এতো নিচু মাথা উঁচু করে দাড়ানোর নেই সুযোগ।

মাইন উদ্দীনের চাচাতো ভাই আলা উদ্দিন বলেন, ছয়টা মেয়ে আর একটা ছেলে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে আছে। এই ঘরে থাকার মতো অবস্থা নাই। এমন ঘর আর বাংলাদেশের কোথাও আছে বলে আমার মনে হয় না। নিজের ওষুধ যে কিনবে তার সামর্থ্য নাই। মেয়েদের বিয়ে দেওয়ারও সামর্থ্য নাই। যদি সরকার বা কোনো অর্থশালী লোকজন এগিয়ে আসতো তাহলে মাইন উদ্দীনের উপকার হইতো। ঝড় বৃষ্টি হলে সে কিভাবে থাকবে আল্লাহ ভালো জানে। সে কি মারা যাবে নাকি থাকবে বলা কঠিন। ঘরে দাঁড়ানো যায় না।

আজাদ উদ্দিন নামের আরেক ভাই বলেন, আমার ভাই অসুস্থ হয়ে করোনার সময় থেকে ঘরে বসে আছে। সে প্যারালাইস রোগী কিন্তু ওষুধ কিনতে পারতেছে না। আবার চাল ডাল ও কিনতে পারছেনা। তার ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে খাওয়ার মত সে সামর্থ্য নাই। যদি সরকার সহযোগিতা করে তাহলে ভবিষ্যতে চলার মত গতি থাকবে।

মাইন উদ্দীনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, স্বামীকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কি খাই কিভাবে দিন যায় বলতে পারিনা। এক আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না আমাদের কষ্ট। আর কাউকে বোঝাতেও পারিনা। মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে পারিনা। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে আমাদের রক্ষা হবে নাহয় আমাদের মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কূল নাই।

গ্রাম্য ডাক্তার মো. নুর উদ্দিন বলেন, মইনুদ্দিন সেলিম সাইকেল মেকানিক ছিল। সে দীর্ঘ চার বছর ধরে অসুস্থ। তার বাবাও প্যারালাইজড ছিলেন। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। সেলিম মেকার দুই বার স্ট্রোক করেছেন। আমি অনেক চিন্তাভাবনা করে তাকে ওষুধ দিচ্ছি। সে মাইজদী গিয়ে যে ডাক্তার দেখাবে তার সামর্থ্য নাই। আমি ওষুধের অনেক টাকা পাই। তারপরও আমি চাই সে সুস্থ হোক। তার নুন আনতে পান্তা ফুরায়।

মাইন উদ্দীন সেলিম বলেন, আমার মেয়েরা অন্যের সবজি তুলে যে টাকা পায় তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। ভাত খেলে ওষুধ খেতে পারি না, ওষুধ খেলে ভাত খেতে পারি না। কোনদিন একবেলা খাই না খেয়ে থাকি। আমি যখন আমি যখন চোখ বন্ধ করি তখন আমি চিন্তা করি আমি যদি মারা যাই আমার মেয়ে ছেলে গুলোর কি হবে। তারা কি করে বাঁচবে আর কি খাবে। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যদি একটা ঘর পেতাম তাহলে আমি মারা গেল আমার সন্তানদের মাথা গোজার ঠাই থাকতো।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আল আমিন সরকার বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম এরকম একটি পরিবার খুব দূর্বিষহ জীবন যাপন করছে। তাদের ঘরের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন মানুষ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি খোঁজখবর নিব এবং সত্যিই উনি যদি খুবই মানবতার জীবনযাপন করেন তাহলে আমি একটা ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ বিষয়ে আমার শ্রদ্ধেয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলবো এবং আমার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তার পাশে থাকবো।

আরও পড়ুন