• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

১১২ টাকায় সরকারি চাকরি পেলো তারা, সেবা দিতে টাকা না নেওয়ার ঘোষণা

উপজেলা প্রতিনিধি, সদর : মাত্র ১১২ টাকার ব্যাংক ড্রাফটে চাকরি পেয়েছি। কোথাও কোনো ঘুষ দিতে হয়নি। সরকারি চাকরিতে কোনো ঘুষ লাগে না তার প্রমাণ আমিই। যতদিন চাকরি করবো ততদিন কারো থেকে টাকা নিবো না।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এভাবেই জেলা প্রশাসনে চাকরি পেয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন তাওহীদূর রহমান। কেবল তাওহীদ নয়, এমন ১৮ জনকে ঘুষ ছাড়া চাকরি দিয়ে ধারণা পাল্টে দিলেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। বিনা টাকায় চাকরি পেয়ে তারা আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। এর আগে নিজ সম্মেলন কক্ষে চাকরি প্রাপ্তদের হাতে ফুল তুলে দেন তিনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আওতায় ১৮ টি ৪র্থ শ্রেণির শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জন আবেদনকারী। এর মধ্যে অফিস সহায়ক ৫ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ৮ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ২ জন, বেয়ারা ২ জন ও মালি পদে ১ জন রয়েছেন।

নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হাতিয়ার মিরাজ উদ্দিন বলেন, মাত্র ১১২ টাকা খরচে চাকরি পাব স্বপ্নেও ভাবিনি। যেহেতু ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছি তাই আজীবন ঘুষ ছাড়া মানুষকে সেবা দেব, ইনশাল্লাহ। সবার কাছে দোয়া চাই। আমি কখনো অনিয়মের আশ্রয় নিবো না।

বেয়ারার পদে চাকরি পাওয়া শাকিল মিয়া বলেন, আমাদের সামর্থ্য নেই টাকা পয়সা দিয়ে চাকরি নেওয়ার। ১১২ টাকা দিয়ে আবেদন করেছি। অনেকেই হতাশ করেছে ঘুষ ছাড়া চাকরি হবেনা বলে কিন্তু ঘুষ ছাড়াই সরকারি চাকরি আমি পেয়েছি। এজন্য জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

অফিস সহায়ক পদে চাকরি পাওয়া সৌরভ ভট্টাচার্য বলেন, আমার সরকারি চাকরি হবে তাও টাকা ছাড়া এটা আমি নিজেও ভাবতে পারতাম। কিন্তু আজ আমিই প্রমাণ৷ সুতরাং আমি সবাইকে বলতে পারবো ঘুষ ছাড়া চাকরি হয়। জেলা প্রশাসক স্যারকে ধন্যবাদ জানাই এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

এ সময় জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তোমরা যারা টাকা ছাড়া, তদবীর ছাড়া চাকরি পেয়েছো, আমার স্বনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে মানুষের সেবা করার। তোমাদের কাছে দাবি থাকবে মানুষকে ঘুরাবে না, ভোগাবে না। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। আমি আশা করি নিয়োগপ্রাপ্ত সকলে নিজের এলাকার মানুষের জন্য সেবার সুযোগ আছে এবং সেই সেবা যেন জনগণ পায়। আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে কাজ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নোয়াখালীর সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলার সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিরপেক্ষ ভূমিকা ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজিমুল হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না মাহমুদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালীর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শহীদুল হক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) শারমিন আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) অজিত দেব, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. বায়েজিদ বিন আকন্দ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মেহরাব হোসাইন, কে এইচ তাসফিকুর রহমান, আবিদা খানম বৈশাখী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন