• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

অর্থাভাবে মেডিকেলে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় মেহেনাজ

উপজেলা প্রতিনিধি, চাটখিল : মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছেটা দশম শ্রেণি থেকেই। কলেজে ওঠার পর ইচ্ছাটা আরও প্রবল হয়েছে। কলেজে পড়ার সময় থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি মেডিকেলে ভর্তির কিছু প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে মাহবুবা মেহেনাজ। তখন থেকেই আমি সাদা এপ্রোনের সঙ্গে স্টেথোস্কোপ পরা নিজেকে কল্পনা করত। এভাবে নিজেকে নিজেই অনুপ্রেরণা দিতো।

মেহেনাজ এবছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে মেহেনাজ জাতীয় মেধায় ১০৩৪তম স্থান লাভ করেন। সে তার পছন্দের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন। এবার তার স্বপ্ন সত্যি হবার পালা। কিন্তু অর্থের কাছে সব কিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মেহেনাজের চিকিৎসক হওয়া। সে চাটখিল উপজেলার কড়িহাটি ছালেমিয়া ফাজিল মাদ্রাসার গণিতের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসানের বড় মেয়ে। তার মা মারজাহান বেগম একজন গৃহিণী।

মাহবুবা মেহেনাজ কড়িহাটি ছালেমিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০২১ সালে জিপিএ ফাইভ পেয়ে দাখিল পাস করেন তিনি। পরে স্থানীয় চাটখিল মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে জিপিএ ফাইভসহ উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। সে মাদ্রাসায় পড়েও পছন্দের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুশি ।

মাহবুবা মেহেনাজ বলেন, বাবা মাদ্রাসা শিক্ষক, মা গৃহিনী ফলে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেকে লড়ে যেতে হয়েছে। সারাদিন কলেজ করে এসে আবার টিউশন করানোর পর খাওয়ার সময় থাকত না। মা তখন নিজ হাতে ভাতের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে খাইয়ে দিতেন। আমার জীবনের কঠিন সময়গুলোতে আমার মা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আমায় এগিয়ে দিয়েছেন। আমি যখনই হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতাম, আমার মা আমায় আবার উঠে দাঁড় করিয়েছেন। তবে মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফলের পর মায়ের মুখের হাসিটা দেখে অতীতের সব কষ্টগুলা ভুলে গেছি। বাবাও শেষ দিকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছিলেন। মাদ্রাসা থেকে কলেজে আসার পর কলেজের স্যারেরা অনেক বেশি সাহস দিয়েছেন। স্যারদের কথা শুনলে নিজের ভেতর একটা আলাদা সাহস পেতাম।

মাহবুবা মেহেনাজের বাবা কামরুল হাসান বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে যা বেতন পেতাম তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হতো। আমার মেয়ে টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতো। আমার স্ত্রী ঘরের কাজের পাশাপাশি সেলাই মেশিনের কিছু কাজ করতো। সেই আয় আমাদের পারিবারিক কাজে লাগতো। মেয়ের স্বপ্ন মেডিকেলে পড়ার। চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছি তবে সামনে অনেক খরচ। নতুন জায়গায় টিউশনি পেতে সময় লাগবে। তার মেডিকেলে পড়াশোনা চালানো নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি।

মাহবুবা মেহেনাজের মা মারজাহান বেগম বলেন, আমার মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে মহান আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। তার মধ্যে স্বপ্ন জয়ের তীব্র ইচ্ছা ছিলো। আমরা আর্থিক ভাবে সকল চাহিদা পূরণ করতে না পারলেও মানসিক ভাবে তার পাশে ছিলাম। আমাদের মতো সংগ্রামী পরিবার থেকে ডাক্তারি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও প্রয়োজনীয়ও অর্থের অভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কষ্টের। শুধুমাত্র অর্থাভাবে আজ সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে যাচ্ছে।

চাটখিল মহিলা কলেজের উপাধ্যাক্ষ ফারুক সিদ্দিকী ফরহাদ বলেন, ২০২৩ সালের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাহবুবা মেহেনাজ অন্যতম । তার মধ্যে পড়ার আগ্রহ এবং নতুন কিছু জানার আগ্রহ বেশি। নতুন কিছু শেখার আগ্রহ থেকে তার অদম্য ইচ্ছা মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া সেই স্বপ্ন জয় হয়েছে। একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হয়েও সে নিজেকে প্রমাণ করেছে সে পিছিয়ে নেই। আমরা তার পাশে আছি। আমাদের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করবো পাশে দাঁড়ানোর। যদি বিত্তবান কেউ এগিয়ে আসতো তাহলে তার চলার পথ সহজ হতো।

চাটখিল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকিব ওসমান বলেন, অদম্য মেধাবীদের পক্ষে সব সময় উপজেলা প্রশাসন আছে। আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছু সম্ভব হলে করবো পাশাপাশি আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয় এর সাথে কথা বলবো।

আরও পড়ুন