![দৈনিক নোয়াখালীর কথা]( https://dailynoakhalirkatha.com/wp-content/uploads/2023/04/logo-noyakhali.png )
উপজেলা প্রতিনিধি, সোনাইমুড়ী : চলতি বছর ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের ভালো ফলন হলেও বাজারে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। নোয়াখালী সোনাইমুড়ীতে এবার খাদ্য গুদামে ধান দিচ্ছে ফড়িয়ারা। সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু হলেও কৃষকের তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়,এক শতক জমিতেও ইরি-বোরো ধানের চাষাবাদ করেনি এবং কৃষির সঙ্গে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের নাম ওই তালিকায় স্থান পেয়েছে। কৃষকের বদলে ফড়িয়া মহাজনদের মাধ্যমে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান দিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এতে কৃষক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।আবার সরকারি চাকুরীজীবী, প্রবাসী, জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাশীন দলের লোকজন ও এলাকার প্রভাবশালীদের নামও রয়েছে। কৃষকদের বদলে দালাল-ফড়িয়া ও মহাজনরা ধান দিচ্ছে সরকারি গুদামে।কিন্তু এবার মুনাফা বেশি হওয়ার কারণে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে একটি সিন্ডিকেট। তাদের দাপটে সাধারণ কৃষকরা ক্রয় কেন্দ্রের আশপাশে ভিড়তে পারছেন না।
সোনাইমুড়ী খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার অফিসসূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৩২ টাকা কেজি দরে ৩ টন ধান প্রতি কৃষক দিতে পারবেন। প্রতি মন ধান ১২৮০ টাকা মূল্য ধরা হয়েছে। এবারে এই উপজেলায় সাড়ে ৭০০জন কৃষক থেকে ১০৫৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত ৭ মে থেকে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।আগামী ৩১ আগস্ট ধান সংগ্রহ শেষ হবে।
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার চিহ্নিত ফড়িয়া ও সিন্ডিকেটের লোকজন সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, ব্যাংক হিসাবের চেক কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে যে সব কৃষকের ব্যাংক হিসাব নেই, সে সব কৃষককে না জানিয়েই তার নামে ব্যাংক হিসাব খোলা হচ্ছে।সোনাইমুড়ীতে অনিয়মের যাঁতাকলে পড়ে চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি ব্যাহত হতে চলেছে। এ অবস্থায় লুট হয়ে যাচ্ছে প্রান্তিক কৃষকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সরকারি বরাদ্দের সিংহভাগ।স্থানীয় মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া আর দায়িত্বশীলরা মিলেমিশে ওই লুটের কারবার করে চলছে বলে অভিযোগ করেন বঞ্চিত কৃষকরা।
বুধবার বেলা ১২ টার দিকে সরেজমিনে উপজেলার খাদ্য গুদামে গেলে দেখা যায়,ভানুয়াই গ্রামের আব্দুল খালেকের পুত্র হাসানুজ্জামান দুই পিকআপ ধান নিয়ে এসেছেন। তিনি কৃষক কিনা জানতে চাইলে অন্যের কৃষি কার্ড দেখান। তার ধান লেবাররা গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন। সেখানকার কর্মচারীরা ধান পরিমাপ করছেন। বিজয়নগর গ্রামের আলী হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ উল্লাহ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনিও দুই পিকআপ ধান নিয়ে এসেছেন। তার ধান এখনো গাড়িতে রয়েছে। তিনি কৃষক কিনা জানতে চাইলে কৃষি কার্ড দেখান। তবে তিনি এই পর্যন্ত কয়েকবার ধান দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সুরলী গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের পুত্র মিজানুর রহমান তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ইয়ার টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত রয়েছেন। তবে তার কৃষি কার্ডও রয়েছে। তিনি একজন কৃষক। তবে কোন ধান করেননি। তার কার্ডে খাদ্য গুদামে ধান দিয়েছেন অন্য কেউ।
উপজেলার অম্বরনগর গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান, বিজয়নগর গ্রামের কৃষক জাফর আহমেদ জানান, উপজেলা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে হলে নানা ভোগান্তির পোহাতে হয়। প্রতি মনে লেবার খরচ, অফিস খরচ দিতে হয়। আবার গ্রামে গ্রামে কৃষকদের কাছ থেকে ফড়িয়ারা কম দামে ধান কিনে সরকারি মূল্যে গুদামে ধান দিচ্ছে। এতে প্রকৃত কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষক নয় এমন লোকজনের কাছ থেকে খাদ্য গুদামের লোকজন ধান নিচ্ছে। এই সুযোগে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
সোনাইমুড়ী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরান হোসেন তালুকদার বলেন, এখানে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। কোন অনিয়ম হচ্ছে না। প্রকৃত কৃষকরা ধান দিচ্ছে। তবে কৃষকদের তালিকা তিনি করেননি। এই তালিকা তৈরি করেছেন উপজেলা কৃষি অফিস। যদি তালিকায় কোন গরমিল থাকে তাহলে তারাই দায়ী।
সোনাইমুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, যারা ধান চাষ করেন তারাই কৃষক। তাদেরকে কৃষি কার্ড দেওয়া হয়েছে। তবে যদি কোন কৃষক ধান করেননি,তার নাম তালিকা রয়েছে। সে ধান বিক্রি করার জন্য নাম দিয়েছেন। তালিকায় কৃষক নয় এমন ব্যক্তির নাম রয়েছে তা সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।
আপনার মতামত লিখুন :