• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর, ২০২৩
সর্বশেষ আপডেট : ৬ নভেম্বর, ২০২৩

টানা অবরোধ : হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে

তৃতীয় দফায় অবরোধ ঢেকেছে বিএনপি। এ নিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ অবরোধের ফাঁদে রয়েছে দেশ। এতে খাবারের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চায়নিজ, পার্টি সেন্টার ও ফাস্ট ফুডের ব্যবসায় ধস নেমেছে। এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে বিক্রি গড়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে বলে দাবি মালিকদের।

এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের ঊর্ধ্বগতিতে প্রভাবিত হয় হোটেল এবং রেস্তোরাঁর ব্যবসা। দাম বাড়ার পর তাদের বিক্রি কমেছে। এরপর এ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ব্যবসাকে ধসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হরতাল-অবরোধে মানুষের খাবার বন্ধ না থাকলেও রাজধানীজুড়ে ভাসমান মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়াটাই তাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবরোধের প্রভাব বেশি পড়েছে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট আর ফাস্ট ফুডের দোকানগুলোতে। স্থানীয়দের পাশাপাশি এসব রেস্টুরেন্টের বড় ভোক্তা হলেন ঢাকায় ঘুরতে আসা মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা ব্যক্তিরা। কিন্তু সবার মধ্যে আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতা থাকায় এ লোকজন আগের মতো খেতে আসছে না। রাজধানীজুড়ে দেশের বিভিন্ন এলকা থেকে আগত মানুষের সংখ্যা গত কয়েকদিন উল্লেযোগ্যভাবে কম।

রাজধানীর পল্টন এলকায় ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্টের অংশীদার এনায়েত রহমান বলেন, আতঙ্কে মানুষ এ এলাকায় আসছে না। আগে দিনে লাখ টাকার বেশি বিক্রি হতো। এখন ৫০-৬০ হাজার হচ্ছে না। দুপুরে খাবার বিক্রি কিছুটা হলেও সকাল-সন্ধ্যার নাস্তায় কোনো ক্রেতা থাকে না।

jagonews24

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমরা ভেন্ডারদের (চাল, ডালের মতো পণ্যগুলোর সরবরাহকারী) বিল দিতে পারছি না। স্টাফদের দৈনিক বেতন দিতে সমস্যা হচ্ছে। লাভ-তো দূরের কথা।

ওই এলাকায় বৈশাখী হোটেলের ম্যানেজার তেলু ভূঁইয়া বলেন, টিকে থাকা দায় হয়ে গেছে। আগের থেকে অর্ধেক রান্না-বান্না করেও বিক্রি হচ্ছে না। দিন শেষে প্রচুর খাবার অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। সেজন্য লোকসান হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, অবরোধে সবার ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিক্রি কমে গেছে অন্তত ৫০ শতাংশ।

তিনি বলেন, এর আগে আমরা করোনায় পিষ্ট হয়েছি। এরপর দ্রব্যমূল্যের অভিঘাত গেছে এ শিল্পের ওপর। এখন অবরোধে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার উপক্রম হয়েছে।

শুধু বড় রেস্তরাঁ নয়, ছোট ছোট হোটেল, ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানের বিক্রিও কমেছে। ১২ জনের বসার সিট নিয়ে আয়োজন হোটেলে কথা হয় মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ মানুষের খাবার রান্না হতো। এখন গতকাল (সোমবার) থেকে ১৪০ জনের রান্না হচ্ছে। তাও কিছু খাবার থেকে যাচ্ছে।

খিলগাঁও এলাকা হোটেল রেস্তরাঁর জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। সেখানে ভূতের আড্ডা পার্টি সেন্টারে শাকিল আলম বলেন, অনেকে পরিবার নিয়ে এখানে খেতে আসেন। যাদের অনেকেই আসেন গাড়ি করে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে কেউই আসতে পারছে না। রাস্তাঘাটে গাড়ি পোড়ার কারণে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার কম করছেন মানুষজন।

jagonews24

রামপুরার কস্তুরি হোটেলে সকালে চাহিদা থাকে নান পরোটার, দুপুর আর রাতে ভাতের। এ দিয়েই ভালো ব্যবসা হয় রেস্টুরেন্টটির। কিন্তু দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, জনা পাঁচেক লোক খাবার খাচ্ছেন। এর বাইরে সব টেবিল-চেয়ারই খালি। কাজ না থাকায় কর্মচারীদের মধ্যে আলস্য দেখা যায়।

বেচাবিক্রি কেমন, জানতে চাইলে রেস্টুরেন্টটির দায়িত্বরত ম্যানেজার ফারুক বলেন, হরতাল-অবরোধে শুধু স্থানীয় লোকজনই এখানে খেতে আসছেন। বাইরের লোকজন আসতে পারছেন না। এ এলাকায় এখন বাাইরের কোনো লোক নেই।

মালিবাগে ফুডি নামের একটি ফাস্ট ফুড ও চায়নিজ রেস্টুরেন্ট আছে। এখানকার খাবারের প্রধান ক্রেতাই হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। হরতাল-অবরোধে অনিয়মিত স্কুল-কলেজে শিক্ষাদান হওয়ায় তাদের বিক্রিও কমে গেছে।

মগবাজার এলাকার জলপাই পার্টি সেন্টারের ম্যানেজার আব্দুল জলিল বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠান কমে গেছে। সেজন্য বুকিং একদম কম।

তথ্য বলছে, দেশে হোটেল ও রেস্তোরাঁর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫ লাখ। সেগুলোতে কর্মরত মানুষের সংখ্যাও ২০ লাখের বেশি। এছাড়া ফাস্টফুড, দই-মিষ্টির দোকান আছে আরও লাখখানেক। সারা দেশের হেটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর প্রতিদিনের বিক্রির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটির কাছাকাছি। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের শহরে।

আরও পড়ুন

  • বিশেষ প্রতিবেদন এর আরও খবর