• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

এক ইউনিয়নে প্রতিদিন বিক্রি হয় দুই কোটি টাকার শিম

উপজেলা প্রতিনিধি, সুবর্ণচর : জেলা শস্য ভাণ্ডার নামে খ্যাত সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই শিম আর শিম। যেন শিমের রাজ্য সূবর্ণচর! শত শত হেক্টর জমিতে শুধু শিম চাষ হয় এখানে।

কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় শিম চাষ করে এখন হাজারও চাষির মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতিদিন এই ইউনিয়ন থেকে দুই কোটি টাকার শিম সারাদেশে যায়। আর দাম ভালো পাওয়ায় এখানকার কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে।

সরেজমিনে পুরো মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন জুড়ে পিচঢালা সড়ক অথবা মেঠোপথ দিয়ে এগোলে দুই পাশে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চোখে পড়ে শিম ক্ষেত। বিস্তীর্ণ মাঠ, জমি ও ঘেরের আইলে সর্জন পদ্ধতিতে মাচায় শিম চাষ করা হয়েছে। এখন মৌসুমের শেষ সময়। তবু সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি পরিচর্যা, শিম তোলা, বাজারজাত করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। যদিও এ পর্যন্ত কয়েক দফা শিমের ফলন তোলা হয়েছে। তবে এখনও ফুল আসায় ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রায় একইরকম ফলন হবে।

উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, সুবর্ণচরে চলতি শীত মৌসুমে মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নে চার হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করেছেন সহস্রাধিক চাষি। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ২৫ টন করে প্রায় পাঁচ হাজার ২৫০ টন শিম উৎপাদন হবে। বর্তমানে বাজারে শিমের ভালো দাম রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে দুই কোটি টাকার শিম সারাদেশে যাচ্ছে। এক মৌসুমে শতকোটি টাকার শিম বিক্রি হয়। আগে বাড়ির আঙ্গিনায় সীমিত পরিসরে শিম চাষ করা হতো। এখন চাহিদা বেড়েছে, ফলনও বেড়েছে। ফলে কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনাবাদী পতিত জমিকে আবাদী জমিতে রূপান্তরিত করে শিমের আবাদ করা হচ্ছে।

কৃষক জহিরউদ্দিন বলেন, একেকজন চাষি আট একর দশ একর করে শিম চাষ করে। আমি এ বছর এক একর আবাদ করেছি। দাম পেয়েছি দুই লাখ টাকা। আমার খরচ হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। আমাদের শিমগুলো বিভিন্ন জেলায় যায়। আমরা শিমের দাম ভালো পাচ্ছি।

কৃষক মিলন মিয়া বলেন, সব থেকে বেশি শিম মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে উৎপাদন হয়। শিমের দাম যেমন পাচ্ছি, শিমের বিচির দামও পাচ্ছি। আমাদের এখানে আড়ৎ থাকায় বিক্রি ভালো হচ্ছে। আমরা লাভবান হচ্ছি এটাই বড় কথা।

প্রতিদিন ৭-৮ লাখ টাকার শিম সারাদেশে পাঠান উদ্যোক্তা মো. সিরাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার শিম উঠতেসে। এসব শিম ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ সারাদেশে যাচ্ছে। শিমের বিচির চাহিদা প্রচুর। সরকারিভাবে যদি এসব বিচি বিদেশে রপ্তানি হতো তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হয়। পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যায়। যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে উন্নত হলে কৃষক আরও বেশি লাভবান হতো।

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সুবর্ণচরে চলতি শীত মৌসুমে মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নে চার হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করেছেন সহস্রাধিক চাষি। তাকালে মনে হয় শিমের রাজ্য। চোখ জুড়িয়ে আসে। প্রতিদিন গড়ে দুই কোটি টাকার শিম সারাদেশে যাচ্ছে। এক মৌসুমে শতকোটি টাকার শিম বিক্রি হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এসব শিম ও শিমের বিচি বিদেশেও সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগ প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসহ জৈব পদ্ধতিতে শিম উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আগামীতে এই শিমের রাজ্যের পরিধি আরও বিস্তৃত হবে। সবার সহযোগিতায় আমরা আরও বেশি শিম উৎপাদন করতে পারব এবং বিদেশেও বেশি রপ্তানি করতে পারব। তাহলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে এবং তাদের সামাজিক উন্নয়ন হবে। কৃষকের মুখে হাসি ফুটলে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শহীদুল হক বলেন, নোয়াখালীতে সব থেকে বেশি শিমের আবাদ হয় সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নে। এখানকার শিম ও শিমের বিচি সারাদেশে যায়। শিমের বিচি বিদেশেও রপ্তানি হয়। এই অঞ্চলগুলো লবণাক্ত হওয়ায় আগে ফসল হতো না। এখন শিমের আবাদ ভালো হওয়ায় ভবিষ্যতে শিম চাষের বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছি।

আরও পড়ুন