• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চুরির নাটক সাজিয়ে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ : পুলিশ সুপার

উপজেলা প্রতিনিধি, সুবর্ণচর : সুবর্ণচরে মাকে (৩০) ধর্ষণ করতেই চুরির ঘটনা সাজায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সি (৫০)। সে মো. মেহরাজকে (৪৮) দিয়ে সিধ কাটায় এবং গরু বেপারী মো. হারুনকে (৪২) নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে এবং ওই নারীকে ধর্ষণ করে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নিজ সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের মুন্সিকে প্রধান আসামি, হারুনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরপর বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আবুল খায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে গতকাল রাত ৩ টার দিকে চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মেহেরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেহেরাজ একই এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে।

তিনি বলেন, মো. হারুনের সহযোগিতায় ওই নারীকে খাট হতে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে মাটিতে কাঁথা বিছিয়ে আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বার পায়ের বাঁধন ও পরিহিত সেলোয়ার খুলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সে সরে গেলে হারুন তাকে পুনরায় পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। চোরের কাজে আনা মেহরাজ পাশের রুমে থাকা ওই নারীর মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় কানে থাকা স্বর্ণের কানের দুল ও ঘরে থাকা নগদ টাকা নিয়ে যায়। পরে মেয়ের হাতের বাঁধন খুলে দেয় এবং ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি ধমকি দেয়।

তিনি আরও বলেন, মূলত হারুন গৃহবধূর বসতঘরে মালামাল আছে বলে মেহেরাজকে চুরি করতে উদ্বুদ্ধ করে। মেহরাজ রাজী হলে সিধ কেটে ঘরে প্রবেশ করে। প্রবেশের পর হারুনের সাথে মুন্সি মেম্বারকে দেখে মেহরাজ অবাক হয় এবং বুঝতে পারে ধর্ষণ করতেই তাকে দিয়ে চুরির ঘটনাটি সাজিয়েছে। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে। সেখানে রিমান্ড প্রার্থনা করে তথ্য যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। বাকি আসামি হারুনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) নিত্যানন্দ দাস, চরজব্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামসহ জেলায় কর্মরত সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে চরওয়াপদা ইউনিয়নে চরকাজী মোখলেছ গ্রামের একটি নতুন বাড়িতে চোর দল সংঘবদ্ধভাবে ওই গৃহবধূকে (৩০) ও তার মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে। এ সময় ঘর থেকে দুটি নাকফুল, কানের দুল এবং নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে হাতিয়া থেকে এসে চরকাজী মোখলেছ গ্রামে নতুন বাড়ি করেন একজন দিনমজুর। ওই বাড়িতে তিনি স্ত্রী ও তিন কন্যাসহ বসবাস করতেন। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গেলে ২-৩ দিন পর বাড়ির বাইরে থাকতেন। এর আগে কাজের সন্ধানে তিনি বাড়ির বাইরে যান। এ সময় বাড়িতে ওই গৃহবধূ তিন মেয়েকে নিয়ে ছিলেন। রাত ২টার দিকে ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে প্রবেশ করে এক চোর। পরে সে ঘরের দরজা খুলে দিলে আরও দুইজনকে ভেতরে ঢোকায়। এরপর দুইজন পালাক্রমে ওই গৃহবধূকে এবং একজন তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ওই গৃহবধূ ও মেয়ের র হাত-পা, মুখ বেঁধে ঘরে থাকা স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। গভীর রাতে ওই গৃহবধূর শিশু সন্তানদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তার বাঁধন খুলে দেয়। বিষয়টি চরজব্বার থানায় অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

সুবর্ণচর উপজেলাটি গণধর্ষণের জন্য দেশব্যাপী বারবার আলোচনায় আসছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।

আরও পড়ুন