![দৈনিক নোয়াখালীর কথা]( https://dailynoakhalirkatha.com/wp-content/uploads/2023/04/logo-noyakhali.png )
উপজেলা প্রতিনিধি, সোনাইমুড়ী : অবৈধভাবে খাল ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে স্থানীয় ভূমিদস্যুর চক্র। সোনাইমুড়ি বাজার দিয়ে ভুলুয়া খালটি এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। খালের পাশে বড় বড় বিল্ডিং করে পর্যায়ক্রমে সরকারি জায়গা গিলে খেয়েছে প্রভাবশালীরা স্থানীয় কতৃপক্ষ নিরব দেখার যেন কেউ নেই।
নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী পৌর এলাকায় প্রায় ৫০০ মিটার সেচ প্রকল্পের ভুলুয়া খাল অনেক বছর ধরে খনন হচ্ছে না। অবৈধভাবে খাল ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে স্থানীয় ভূমিদস্যুর একটি চক্র। এতে কৃষকদের জমিতে পানি দিতে না পারায় ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা একাধিক অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না।
জানা যায়, উপজেলার পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভুলুয়া খালটি এখন ভূমিদস্যুদের দখলে। খালের পাশে বড় বড় বিল্ডিং করে পর্যায়ক্রমে সরকারি জায়গা গিলে খেয়েছে প্রভাবশালীরা। বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় এলাকার ফসলিজমি ও বাড়িঘর ডুবে যায়। এতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এখানে ৪৩ হাজার ৯০০টি কৃষক পরিবার রয়েছে। সেচ-নির্ভর বোরো ধান চাষের আবাদি জমি রয়েছে ১০ হাজার ১০ হেক্টর। কিন্তু এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। সেগুলোতে পানি দেওয়ার জন্য শক্তিশালী সেচযন্ত্র রয়েছে ২ হাজার ২৬২টি। অনেক বছর ধরে এই খালটি খনন না করায় শুকনো মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করা যাচ্ছে না।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, (বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী) ভুলুয়া খালের দৈর্ঘ্য ১০.৭৫০ কিলোমিটার। চেইনেজ ১০ কিলোমিটার খালটি সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড খনন করে। তবে সোনাইমুড়ী বাজার হয়ে ৫০০ মিটার খাল খনন হয়নি। পৌর এলাকার স্টেশন হয়ে চৌরাস্তা পর্যন্ত, কুমিল্লা সীমান্ত হয়ে চৌমুহনী পর্যন্ত খালগুলো খননের আওতায় আসেনি।
জেলার পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আমির ফয়সাল জানান, সোনাইমুড়ী বাজার হয়ে ৫০০ মিটার খাল খননের আওতায় আসেনি। এর কারণ ওই স্থানে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এগুলো উচ্ছেদ হলে পরে খনন করা হবে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অদৃশ্য ইশারায় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা ও মার্কেট নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশন বন্ধের পথে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এই উপজেলার হাজারও মানুষের দুর্ভোগ চরমে।
স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারি খালগুলো একসময় প্রবাহমান ছিল। বর্তমানে সোনাইমুড়ী পৌর এলাকার স্থানীয় ভূমিদস্যু কমিশনার আলেয়া খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন, মনির বিভিন্ন দোকানঘর, আবুল কাশেমের দখলে আলী টাওয়ার, শাহ আলমের দখলে রয়েছে সরকারি খালের ওপর নির্মিত মদিনা প্লাজা। এ ছাড়া কৌশ্যালার বাগ গ্রামের আব্দুল মন্নান, ফারুক, রুহুল আমিনসহ একটি চক্র খাল দখল করে বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানপাট নির্মাণ করেছেন। আরেকটি চক্র সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গা জেলা পরিষদ থেকে অবৈধ সুবিধা দিয়ে লিজ নিয়ে বাঁশ-কাঠ, সিমেন্টের পিলারসহ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করছেন।
সোনাইমুড়ী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ব মা বাবার বাবু বলেন, খাল খনন না করা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর আলম জানান, অনেক বছর ধরে খাল খনন না করায় সেচ-নির্ভর খাল খননের আবেদন জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর কয়েকবার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া মেলেনি। এখানে জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। মৌসুমে জলাবদ্ধতা বেশি থাকে। যার কারণে মৌসুমে পতিত হিসেবে জমি পড়ে থাকে।
সোনাইমুড়ী পৌর মেয়র নুরুল হক চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, এই খালগুলো একসময় প্রশস্ত ও গভীর ছিল। এগুলো দিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক মালামাল আনা-নেওয়া হতো। বর্তমানে দখল-দূষণে খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। গত বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতা হয়ে পৌর কার্যালয় ডুবে যায়। খালগুলো খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ নিশ্চুপ রয়েছে, আমার কী করার আছে?
আপনার মতামত লিখুন :