• ঢাকা
  • সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২৪

নোবিপ্রবিতে বন্ধুত্ব, ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের ইফতার

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, নোবিপ্রবি : বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলায় ১০১ একরের জমির উপর নির্মিত মনোরম পরিবেশে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে উপকূলের অক্সফোর্ড খ্যাত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-নোবিপ্রবি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতিবছর জড়ো হয় এই ক্যাম্পাসে। প্রতিদিনই এখানে সৃষ্টি হয় নিত্যনতুন স্মৃতির গল্প। সারাবছর শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে থাকে এই ক্যাম্পাস। তবে প্রতিবছর রমজান মাস এলেই এক অন্যরকম মুখরতা বিরাজ করে ক্যাম্পাসে। দিনের সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়লে সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে দলে দলে শিক্ষার্থীরা হাজির হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে।

যে মাঠে এতদিন ছিলো ব্যাট বলের রাজত্ব, সেই মাঠেই ছোট বড় বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে গোল করে বসে পড়ে ইফতার আয়েজনে। সকলের উদ্দেশ্য বন্ধুদের সাথে আনন্দঘন পরিবেশে ইফতার করা। তাইতো এই ইফতারে কী উপকরণ থাকছে তা হয়ে উঠে গৌণ, আর বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতি হয়ে উঠে মূখ্য। ইফতারের আগ মুহূর্তে সবুজ বিস্তৃত মাঠে কেউ ব্যাস্ত থাকে বন্ধুদের সাথে গল্পগুজবে, কেউ ব্যস্ত হয় শরবত বানানোর কাজে কেউবা নেয় ছোলা মুড়ি মাখানোর দায়িত্ব। মাঠের মাঝে পত্রিকা বিছিয়েই শুরু হয় এই মহোৎসবের আয়োজন। সকলের সামনে সাজানো থাকে বাহারি রকমের ইফতার। মসজিদে মুয়াজ্জিনের আযান শুনলে খোলা আকাশের নীচে ইফতারের ধুম পড়ে যায়। সিনিয়র, জুনিয়র, ব্যাচমেট সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই ইফতার আয়োজন সম্পন্ন হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ছাড়াও গোলচত্বর, শহীদ মিনার, লাইব্রেরী ভবনের বারান্দা ও ময়না দ্বীপেও শিক্ষার্থীদের এরকম আয়োজন লক্ষ্য করা যায়। ইফতার শেষে সারাদিনের ক্লান্তি আর অবসাদ ভুলে আড্ডা ও গল্পগুজবে মুখর হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। রোজা শুধু মুসলিমদের ইবাদত হলেও অমুসলিম শিক্ষার্থীদেরও এই ইফতার আয়োজনে যোগ দিতে দেখা যায়। এসময় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা দেখলে মনে হয় এ যেনো বন্ধুত্ব, সম্প্রীতি, ভাতৃত্ব ও ভালোবাসার এক অনন্য মেলবন্ধন। পড়ালেখার উদ্দেশ্যে পরিবার ছেড়ে ক্যাম্পাসে অথবা মেসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের বাড়ির প্রতি মায়া কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করে এই ইফতার অনুষ্ঠান। পরিবার ছেড়ে আসা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসেই খুঁজে নেয় তাদের নতুন এক পরিবার।

শুধু যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকে এমনটি নয়। রমজান এলেই ক্যাম্পাসে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল, জেলা কিংবা বিভাগভিত্তিক ছাত্র সংগঠন। ইফতার আয়োজনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নিজ উদ্যোগে চাঁদা তুলে অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন। একশো এক একরে এধরনের চক্ষু শীতল করা দৃশ্য বারবার ফিরে আসুক। আর এভাবেই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন আরও মজবুত হবে বলে আমরা আশাবাদী।

এ ব্যাপারে খাদ্যপ্রযুক্তি ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের ১৭তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নুসরাতুন্ নাহারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ” এটি আমাদের মুসলমানদের ঐতিহ্য , ভাতৃত্ব ও ভালোবাসার প্রতীক। কখনো আমাদের কোনো সহপাঠী আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে ইফতার আয়োজনে অংশ নিতে না পারলে আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করি। সবাই মিলে একসাথে ইফতার করতে আমাদের খুবই ভালো লাগে।” খাদ্যপ্রযুক্তি ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ফারহানা আক্তার বলে, ” এটি খুব ভালো একটি ব্যাপার।

এই ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে একটি ভাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হয়। পরিবার থেকে দূরে থাকা ও একা একা ইফতার করার দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পারি।” বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান ত্বোয়া বলেন, ” সবাই মিলে একসাথে আনন্দঘন পরিবেশে ইফতার করতে আমাদের খুবই ভালো লাগে। এই উৎসবমুখর আয়োজন খুবই উপভোগ করি আমরা।”

আরও পড়ুন

  • ক্যাম্পাস এর আরও খবর