• ঢাকা
  • সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট : ৬ এপ্রিল, ২০২৪

১২০ টাকায় কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে আপ্লুত নোয়াখালীর ৭৮ তরুণ-তরুণী

স্টাফ রির্পোটার : কেউ জড়িয়ে ধরেছেন মাকে আবার কেউবা জড়িয়ে ধরেছেন ভাইকে। কান্না যেনো থামছেই না। এই কান্না দুঃখের কান্না হয়, এই কান্না আনন্দের। মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে কাঁদলেন তারা। আপ্লুত নোয়াখালীর ৭৮ তরুণ-তরুণী। বিনা টাকায় চাকরি পাওয়ায় তাই বিনা টাকায় সেবা দেওয়ার প্রত্যয়।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ লাইন্সে নোয়াখালী জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়।

এ সময় বিনা টাকায় কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তরুণ-তরুণীরা। অভিভাবকরা বিশ্বাসই করতে পারেননি তাদের সন্তানদের টাকা ছাড়া পুলিশে চাকরি হবে। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নির্বাচিত প্রার্থীদের ফুলদিয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মিষ্টিমুখ করান। এসময় শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থী ও তাদের অভিভাবক অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে তাৎক্ষণিক অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে জেলার ৭৮ জন তরুণ-তরুণীকে চাকরি দেওয়া হয়। ব্যাংক ড্রাফটে ১০০ টাকা জমা দিয়ে পুলিশে প্রায় ২ হাজার ৭১৯ জন তরুণ-তরুণী অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১৫৩ জন। সব শেষে স্বপ্ন এসে ধরা দেয় ১২ জন তরুণী ও ৬৬ জন তরুণের হাতে।

নিয়োগ পাওয়া সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের বজলুল করিম গ্রামের প্রদীপ চন্দ্র সাহার মেয়ে সাথী রানী সাহা বলেন, চাকরির জন্য ঘুষ দেওয়া লাগে নাই। ছোট বেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল আমি পুলিশ হবো। কারণ মানুষকে সরাসরি সেবা দিতে হলে পুলিশ পেশাই মূল পেশা। আমি অনেক খুশী। আমার স্বপ্ন পূরণে যারা সহোযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ। নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান স্যার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ।

বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের সমর বরণ ভৌমিকের মেয়ে নকশী ভৌমিক বলেন, আমি পুলিশে চাকরি পেয়ে অনেক খুশি। পুলিশের কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ আমাকে বিনামূল্যে চাকরিটা দেওয়ার জন্য। আমি যেহেতু বিনামূল্যে চাকরি পেয়েছি আমিও সেবা দিবো বিনামূল্যে।

সুবর্ণচর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চর বৈশাখী গ্রামের মোশাররফ হোসেনের মেয়ে শিরিন শারমিন বলেন, স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই যোগ্য প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। আমার খরচ হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা। এই টাকায় চাকরি পাব ভাবতে পারিনি। আমিও বিনা টাকায় স্বচ্ছতার সঙ্গে জনগণের সেবা করতে চাই।

নিয়োগপ্রাপ্তদের অভিভাবকদেরও খুশির শেষ নাই। সদর উপজেলার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার ছোট ভাই সাজ্জাদুল ইসলাম বিনা টাকায় কোনো তদবির ছাড়া চাকরি পেয়েছে। আমি পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা সবাই মহাখুশি। তদবির ও ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় এটার প্রমাণ আমরা।

অভিভাবক শান্তা রানী সাহা বলেন, আমরা নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। বাবার দুই কন্যা সন্তান। আমার ছোটবোনের চাকরি হয়েছে। সে অনেক খুশি। আমরাও অনেক খুশি। বাবা তেমন কর্ম করতে পারে না। এই চাকরি আমাদের পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

জেলার নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের বাস্তবায়নে “চাকরি নয় সেবা” এই স্লোগানকে সামনে রেখে নোয়াখালী জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ স্বচ্চ, নিরপেক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত হয়েছে। যে সকল প্রার্থী প্রতিটি পরীক্ষায় শারীরিকভাবে যোগ্য, মেধাবী ও সৎ শুধুমাত্র তারাই তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগযোগ্য হিসেবে মনোনীত হয়েছে।

নোয়াখালীবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আইজিপি স্যারের নির্দেশে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। নারী-পুরুষ মিলে ১৩ জনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে যদি কেউ পুলিশ ভেরিফিকেশন ও মেডিকেলে বাদ পড়েন, তবে সেখান থেকে চূড়ান্ত তালিকায় তাকে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

এসময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মংনেথোয়াই মারমা, চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী, নোয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) বিজয়া সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) নিত্যানন্দ দাস, পুলিশ ইনস্পেক্টর মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আমির হোসেন, উপ পরিদর্শক মো. বায়েজিদ মিয়া, নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক সহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

  • বিশেষ প্রতিবেদন এর আরও খবর